পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন?
এক কথায় উত্তরঃ পেঁয়াজ কাটলে পেঁয়াজ থেকে এক ধরনের গ্যাস বের হয় যা আমাদের চোখে সালফিউরিক এসিড তৈরী করে এবং এই সালফিউরিক এসিড দূর করার জন্যই আমাদের চোখ এক ধরনের তরল (যা পানির মত দেখতে) নিঃসৃত করে।
একটু বড় উত্তরঃ পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখে পানি আসেনি এমন মানুষ এই ধরাতে হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের বল্টুর বেলাতেও ঠিক তাই ঘটেছিল। একবার বল্টুর বাড়ির সবাই ঈদের ছুটিতে দেশের বেড়াতে যায়। তখন বল্টুকে নিজের রান্না নিজেকেই করে খেতে হয়েছিল। একদিন সকালে বল্টু গেল ডিম ভাজতে। এর জন্য তাকে পেঁয়াজ কাটতে হল। আর এই পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে বল্টুর দু’চোখ বেয়ে জলের বন্যা বইতে লাগল। শুধুই কি জল? সাথে চোখ জ্বালাপোড়া।
“কিন্তু পেঁয়াজ কাটলেই কেন চোখে পানি আসে? আপেল বা আলু কাটলে তো আসে না!” বল্টুর মাথায় প্রশ্ন।
হুম, বল্টুর মত হয়ত অনেকের মাথায়ই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। তাই কথা না বাড়িয়ে আসুন জেনে নিই দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
প্রথমেই একটা ধারণাকে সবার কাছে পরিষ্কার করতে চাই। তা হল, আমাদের চোখ দিয়ে কিন্তু পানি বের হয় না, যদিও তা দেখতে পানির মত।
তাহলে কী বের হয়?!
যা বের হয়, তাকে ইংরেজিতে Tear বা অশ্রু বলে। অশ্রু হল এক ধরনের disinfecting liquid যা অনেকটা saliva বা লালার মত এবং নিম্নোক্ত উপাদান দ্বারা তৈরী:
পানি (water),মিউকাস তেল (mucus oil),চোখের কোষের জন্য পুষ্টি উপাদান (nutrients) এবংজীবানুনাশক পদার্থ যেমন লাইসোজাইম (antibacterial compound like lysosomes)
আরেকটি বিষয় যেটা জেনে রাখা ভাল যা আমাদের আলোচ্য বিষয়ে কাজে দেবে। তা হল, অশ্রু ৩ প্রকার। যথাঃ
১. Emotional/psychic tear (বিভিন্ন আবেগের সময় এই অশ্রু নিঃসৃত হয়। যেমনঃ সুখ বা দুঃখ)
২. Basal tear (আমাদের চোখ অনবরত অশ্রু নিঃসৃত করতে থাকে যার পরিমাণ খুবই অল্প। এর কাজ হল আমাদের চোখকে সবসময় ভেজা ও পিচ্ছিল রাখা, ধূলাবালি পরিষ্কার করা ইত্যাদি)
৩. Reflexive tear (যখন কোন যন্ত্রণাদায়ক পদার্থ আমাদের চোখে প্রবেশ করে, তখন আমাদের চোখ এই ধরনের অশ্রু নিঃসৃত করে। যেমনঃ পেয়াজের ধোয়া যা খালি চোখে দেখা যায় না, মরিচ বা এসিড ইত্যাদি)
এবার আসা যাক আসল কথায়। অর্থাৎ পেঁয়াজ কাটলে কেন চোখ দিয়ে পানি পড়ে। Oh, sorry! অশ্রু পড়ে। হা! হা! হা!
আমরা যখন পেঁয়াজ কাটি তখন পেঁয়াজের অনেক কোষ ফেটে যায়। ফলে কোষের ভেতর থাকা অ্যামিনো এসিড সালফোক্সাইড (Sulfoxide) এবং এনজাইমল্যাক্রিমেটোরি ফ্যাকটর সিনথেজ(lachrymatory factor synthase) বের হয়ে আসে।এই এনজাইম তৎক্ষণাৎ অ্যামিনো এসিড সালফোক্সাইডকে, সিন-প্রোপেনথায়াল-এস-ওক্সাইড (syn-propanethial-S-oxide) নামক একটি পদার্থে পরিনত করে।Syn-propanethial-S-oxide হচ্ছে একটি উদ্বায়ী (volatile) পদার্থ, যা সহজেই পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রায় গ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।Syn-propanethial-S-oxide-এর এই গ্যাস তখন আমাদের চোখকে অনবরত ভিজিয়ে রাখা basal tear-এর অন্যতম উপাদান পানির সাথে মিলে মৃদু সালফিউরিক এসিডে পরিণত হয়। এই মৃদু সালফিউরিক এসিডকে আপনি ব্যাটারির এসিডের সাথে তুলনা করতে পারেন। ফলে আমাদের চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়।এই জ্বালাপোড়া ভাব কমানোর জন্য চোখের ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি (lacrimal gland) reflexive tear নিঃসৃত করতে থাকে।এই reflexive tear-ই মৃদু সালফিউরিক এসিডকে ধুয়ে আমাদের চোখ উপচে গাল বেয়ে পড়তে থাকে।
অতঃপর আমাদের বল্টু ভাবল, এরপর থেকে পেঁয়াজ কাটার সময় অবশ্যই টাইট চশমা পড়ে নেবে।
ছবিঃ ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি
তথ্যসূত্র (Reference):
https://www.youtube.com/watch?reload=9&v=ERtlCbByqVghttps://www.youtube.com/watch?v=9ZinH1jEhb4https://www.loc.gov/rr/scitech/mysteries/onion.html
0 মন্তব্যসমূহ