জনৈক ছাত্রের প্রশ্নের উত্তরে, আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, মানবিক সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ বিকশিত করতে কী করা প্রয়োজন – বিশ্লেষণ করেছেন সদগুরু
জনৈক ছাত্রের প্রশ্নের উত্তরে, আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, মানবিক সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ বিকশিত করতে কী করা প্রয়োজন – বিশ্লেষণ করেছেন সদগুরু
প্রশ্ন: নমস্কার। আমার বেশ বড় স্বপ্ন আছে, আশা করি তা সত্যি হবে একদিন। কিন্তু আমি সামাজিক পরিসরে সহজভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারিনা এবং বাইরের জগতের মুখোমুখি হতে ভয় পাই। কলেজের গন্ডী পেরিয়ে আমার স্বপ্ন সফল করতে কীভাবে এগোবো এবং স্বপ্নগুলি ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় থেকে কীভাবে মুক্তি পাবো ?
সদগুরু: সাধারণ অবস্থায় মানুষ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে। কিন্তু আমি তোমাকে বলতে চাই, তোমার স্বপ্নকে আপাতত ঘুম পাড়িয়ে রাখো বেশ কিছুদিনের জন্য। এখনই এত স্বপ্ন দেখো না এবং আগামী পৃথিবীতে তুমি কী হতে চাও তা এত তাড়াতাড়ি স্থির করে ফেলো না, এটা অনেকটাই আগে হয়ে যাচ্ছে।
তোমার স্বপ্নগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে রাখো আপাতত, স্বপ্ন হল তোমার জীবনের অতীত অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতি।
আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তুমি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ হয়ে উঠবে। বাসতবে, আজ থেকে আগামীকালের মধ্যে সবকিছু দৃশ্যমান না হলেও কিছু না কিছু পরিবর্তন হবেই। তাই, এখনই এভাবে ভাবতে শুরু করো না যে, “আগামী পৃথিবীতে আমি কী করতে চলেছি ?” কারণ, সেক্ষেত্রে তুমি ওই ক্ষুদ্র, অপদার্থ স্বপ্নটিকেই আঁকড়ে পড়ে থাকবে। এই মুহূর্তে তোমার কাজ হল, যত বেশি সম্ভব নিজেকে সমৃদ্ধ করা। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করো – তোমার শরীর, মন, আবেগ আর বুদ্ধিবৃত্তির মাপকাঠিতে। এখন তোমার কাজ হল, জীবনের সব ক্ষেত্রে নিজেকে যত দূর সম্ভব প্রস্তুত করতে থাকা।
প্রতিযোগিতায় নামার প্রস্তুতি
এক অর্থে, স্বপ্ন বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা হল, তুমি নিজেকে একটি নির্দিষ্ট ধরণের প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলতে চাইছো। সকলেই এখন এটাকে “rat race” বলে অভিহিত করছে। যদি তুমি এই ধরণের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ো তখন তার অর্থ দাঁড়াবে কে কার থেকে সামান্য এগিয়ে আছে। এই দৌড়ে উত্তীর্ণ হতে গেলে তোমাকে অবশ্যই ইঁদুরের মতো হয়ে উঠতে হবে। এটা বিবর্তনের ধারায় সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী যাত্রা। যদি তুমি এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হও, হয়তো তুমি বড়সড়, ধেড়ে ইদুরের মতো super-rat হয়ে উঠবে, কিন্তু সেও তো ইঁদুর হয়েই থাকা। এভাবে ভাবা বন্ধ করো যে, “আমি কোথায় থাকবো, কীভাবে কার থেকে কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকবো ?” এই সময় যত বেশি সম্ভব গ্রহণ করতে থাকো। এখনও সেই সময় আসেনি যে, যত দ্রুত সম্ভব আমের ফলন ফলাতেই হবে। এখন সময়, ফুলটাকে কুঁড়ি থেকে বিকশিত হতে দেবার।
প্রতিযোগিতায় যদি জিততে চাও, তুমি চাও বলেই যে সেটা হবে, তা কিন্তু একেবারেই নয়। তোমার ওই মানবিক যন্ত্রটিকে সঠিক ভাবে উপযোগী করে তুলতে হবে। এই মুহূর্তে তোমার কাছে রয়েছে একটি মারুতি ৮০০ গাড়ি কিন্তু তুমি চাইছো এই গাড়িটি নিয়েই ফর্মূলা ওয়ান প্রতিযোগীতায় জিততে। স্বপ্নে তুমি দেখতেই পারো যে, লুইস হ্যামিল্টন তোমাকে টেক্কা দিতে প্রাণপ্রণ চেষ্টা করেও পারছে না, তোমার মারুতি ৮০০ গাড়িটি নিয়েই তুমি ওকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেলে! এভাবে যা খুশি স্বপ্নে তুমি দেখতেই পারো, কিন্তু সত্যিই যদি প্রতিযোগিতার ট্র্যাকে এরকম কিছু করতে যাও, তোমার মারুতির চারটি চাকাই চারদিকে উড়ে যাবে।
প্রতিযোগিতায় জিততে যেও না। তোমার মানবিক যন্ত্রটিকে উপযুক্ত করে তলো – এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দৌড়ে জয়ী হওয়ার কথা ভাবছো মানে, তুমি প্রতি মুহূর্তে পিছন ফিরে দেখছো আর ভাবছো যে, “কেউ আমার পিছনে আছে কিনা!” তোমার চারপাশে যদি অসংখ্য নির্বোধ থাকে আর তুমি তাদের মধ্যে জয়ী হও, নিশ্চিত ভাবেই তুমি আরও বড় নির্বোধ। এমনকি প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার ভাবনাটাই ত্যাগ করো। অন্যের চেয়ে ভালো হতে চাওয়ার বিপথগামীতার রোগে ভুগছে সমগ্র মানবজাতিটাই। এভাবে চলতে থাকলে সর্বদাই বিবাদ বিসংবাদ লেগেই থাকবে তোমার জীবনে। সবচেয়ে বড় কথা হল, অন্যের ব্যর্থতাকে যদি উপভোগ করতে শুরু করো, সেটা তোমাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলবে।
স্বপ্নের সীমানা পেরিয়ে
এই পৃথিবীতে তোমার করণীয় কী? সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যেটা, সেটাই করা উচিত, তোমার আজগুবি ভাবনা অনুযায়ী কিছু করতে যেও না। তোমার কাল্পনিক ভাবনা জগতের কাছে প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে, সেগুলো করার মধ্যে কোনও বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় নেই। ইতিপূর্বেই বহু মানুষ তাদের কল্প ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করতে গিয়ে নানা ভাবে এই পৃথিবীর ক্ষতিসাধন করেছে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বা জরুরী যেটা, সেটাই যদি আনন্দের সঙ্গে করে যেতে পারো, সেক্ষেত্রে তা মানুষের কাছে প্রতিভাত হবেই এবং তোমার কাজ চারপাশের সমর্থন আদায় করে নেবে – সত্যিই কিছু ঘটবে তখন।
তোমার স্বপ্নগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে রাখো আপাতত, স্বপ্ন হল তোমার জীবনের অতীত অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতি। ভবিষ্যতের কাছে অতীতের কোনও মূল্য নেই। এটা শুধু ভবিষ্যতের ভাবনার নামে অতীত অভিজ্ঞতার অর্থহীন চর্বিতচর্বণ। অধিকাংশ মানুষের কাছেই ভবিষ্যতের অর্থ হল, অতীতের একটি টুকরোকে নিয়ে তাকে নানা কাল্পনিক সাজে সাজিয়ে সেটাকেই ভবিষ্যৎ বলে ভেবে যাওয়া – সামান্য উন্নত ভাবনার প্রকাশ আর কী!
আমি তোমার স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিতে চাই। ওগুলোকে বিনষ্ট হতে দাও, তবেই তোমার জীবনের চূড়ান্ত সম্ভাবনাকে বিকশিত করার আকাঙ্ক্ষার জন্ম হবে।
যদি ভবিষ্যতের কথা বলো, সেটা সম্পূর্ণ নতুন হয়ে আসার কথা। এমনকি তোমার স্বপ্নেও যা নেই, সেরকম কিছু ঘুটুক তোমার জীবনে – এটাই আমার আশীর্বাদ। যা তুমি কল্পনাতেও আনতে পারোনি সেরকমই কিছু যেন ঘটে তোমার জীবনে। যা তুমি স্বপ্নে দেখছো, সেটাই যদি ঘটে, কী করবে সেটা নিয়ে? তোমার স্বপ্ন তো ততটুকু নিয়েই যতটুকু তুমি ইতিমধ্যেই জানো। আর শুধু যদি সেই জানাটুকুই ঘটে তোমার জীবনে, সে তো এক অবনত জীবন। এমন কিছু ঘটুক, যা তুমি এখনও স্বপ্নেও ভাবতে পারোনি – তবেই তো জীবন প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
আমি তোমার স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিতে চাই। ওগুলোকে বিনষ্ট হতে দাও, তবেই তোমার জীবনের চূড়ান্ত সম্ভাবনাকে বিকশিত করার আকাঙ্ক্ষার জন্ম হবে।
সম্পাদকের কথা : : যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.
2 মন্তব্যসমূহ
💗🙏
উত্তরমুছুনSei 🥰🌸🙏
উত্তরমুছুন