যে আটটি উপায়ে আপনি বাড়াতে পারেন মগজের শক্তি
স্মৃতি যখন ধুসর।
নাম, ফোন নাম্বার, জায়গার নাম মনে রাখতে পারেন না? বলা হয়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে যুক্তি তৈরির ক্ষমতা, দ্রুত জবাব তৈরির মতো মানসিক ক্ষমতা কমতে থাকে।
কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়লেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই।
সহজ কিছু কায়দাকানুনের মাধ্যমে মগজের শক্তি বাড়ানো যায়:
১. ব্যায়ামে মস্তিষ্কের আকার বাড়ে
শরীর আর মনের সুস্থতার চাবিকাঠি হচ্ছে ব্যায়াম।
এটা খুব সত্যি কথা। শরীরচর্চা করলে দেহের পেশির সাথে সাথে মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের সিন্যাপসের সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে মগজে নতুন নতুন কোষ তৈরি হয়।
আর কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের ফলে মগজে বেশি হারে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়। আর আপনি যদি খোলা জায়গায় ব্যায়াম করেন, তাহলে বাড়তি পাওনা হলো ভিটামিন ডি।
টিপস: শরীর চর্চার পাশাপাশি নতুন জায়গায় বেড়াতে যান, নতুন ধরনের কাজ শুরু করুন। অথবা নতুন কোন আইডিয়া নিয়ে কাজ করুন।
যেমন, যদি আপনার শখ হয় বাগান করা, তাহলে আরো কিছু বন্ধুকে সাথে নিয়ে বাগান করুন। পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগলে, সাথে যাওয়ার সঙ্গী খুঁজে বের করুন।
শুধু খেয়াল রাখবেন পুরো ব্যাপারটি যেন আপনি উপভোগ করতে পারেন। এতে মস্তিষ্কের ওপর ব্যায়ামের উপকারিতা বাড়ে।
২. হাঁটাচলায় বাড়ে স্মৃতিশক্তি
বাগান করার মধ্য দিয়ে শরীরের ব্যায়াম হয়, তেমনি মনেরও ব্যায়াম হয়।
বহু গবেষণায় এটা প্রমাণিত। অভিনেতারাও এই কাজটা করে থাকেন।
কোন শব্দ বা বাক্য যদি আপনি হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা বহুদিন ধরে আপনার মনে থাকবে।
টিপস: এরপর কোন বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করতে হলে সেটা হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন।
কিংবা একটু বাইরে ঘুরে আসুন।
৩. মগজের শক্তির জন্য বেছে নিন সঠিক খাবার
আপনার পাকস্থলী ঠিক মানে আপনার মগজও ঠিক।
আপনার খাবারের ২০% শর্করা এবং শক্তি আপনার মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের কাজের পুরোটাই নির্ভর করে তার গ্লুকোজের মাত্রার ওপর।
শরীরে গ্লুকোজের মাত্রায় হেরফের হলে আপনার মনেও দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা।
যেসব খাবার আপনারা খুব পছন্দ সেগুলো খেলে আপনার মস্তিষ্কের 'রিওয়ার্ড এরিয়ায়' ডোপামিন রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আপনার মনে খুশি খুশি ভাব হয়।
কিন্তু মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার পেটের দিকেও নজর রাখতে হবে।
মানুষের দেহের পরিপাকতন্ত্রে একশো ট্রিলিয়নেরও বেশি অণুজীব বসবাস করে। এরা আপনার মস্তিষ্কের সঙ্গেও সংযোগ রক্ষা করে।
মগজের সুস্থতার জন্য এই অণুজীবগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা খুব জরুরি।
আসলে, পাকস্থলীকে অনেক সময় 'দ্বিতীয় মগজ' বলে ঢাকা হয়।
পেটে নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার ঢুকলে এসব অণুজীবের মাধ্যমে তার সুফল মস্তিষ্কে পর্যন্ত পৌঁছায়।
টিপস: মস্তিষ্কের কোষ ফ্যাট অর্থাৎ স্নেহ পদার্থ দিয়ে তৈরি। তাই খাবার থেকে তেল-চর্বি একেবারে বিদায় না করাই ভাল।
বাদাম, তেলের বীজ, মাছ ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে জন্য ভাল।
আর খাবার সময় একা একা না খাওয়াই ভাল। সবার সাথে বসে খাবার খেলে তা মস্তিষ্কের জন্য সুফল বয়ে আনে।
৪. খুঁজে নিন অবসর
পরিশ্রমের ফাঁকে ফাঁকে অবসর নেয়াও জরুরি।
স্বল্প মাত্রার মানসিক চাপ আসলে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
এতে বিপদের সময় বা জরুরি প্রয়োজনে পরিস্থিতিকে দ্রুত মোকাবেলার শক্তি পাওয়া যায়।
কর্টিসল বলে হরমোনের কারণে দেহ-মন চাঙা হয় এবং মনোযোগের একাগ্রতা বাড়ে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মস্তিস্কের জন্য খুবই খারাপ।
সুতরাং, কাজের ফাঁকে অবসরের সময় বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মস্তিষ্ককে অবসর দিয়ে, এবং নিজেকে মূলত: সুইচ অফ করে, আপনি আপনার মগজের ভিন্ন একটি অংশকে ব্যায়াম করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
এরপর যদি কেউ দেখে যে আপনি কাজের মধ্যে বসে দিবাস্বপ্ন দেখছেন তখন আপনি বলতে পারবেন যে আপনি মস্তিষ্কের ভ্ন্নি একটি অংশের ব্যায়াম করছিলেন।
টিপস: রিল্যাক্স করতে অসুবিধে হলে যোগব্যায়াম কিংবা মাইন্ডফুলনেস চর্চার সাহায্য নিতে পারেন।
এগুলো আপনার দেহের স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করবে।
৫. নতুন কিছু শিখা
নতুন কিছু শেখার মধ্য দিয়ে মগজকে আরো সক্রিয় করে তুলুন।
মগজের শক্তি বৃদ্ধির একটা পথ হলো নতুন কোন কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করা।
ছবি আঁকা কিংবা বিদেশি ভাষা শিক্ষার মধ্য দিয়ে এটা করা সম্ভব।
টিপস: নিজে কিংবা বন্ধুদের সাথে নিয়ে অনলাইন গেমস খেলুন। শুধু নিজেকে চ্যালেঞ্জ করাই না, এর মধ্য দিয়ে অন্যদের সাথে সামাজিক যোগাযোগও বাড়বে।
৬. সুরের মাঝে লুকিয়ে আছে শক্তি
সুরের মাধ্যমে জেগে ওঠে মস্তিষ্ক। বাড়ে মেধা।
সঙ্গীত যে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে, তার প্রমাণ রয়েছে।
কেউ গান শোনার সময় যদি তার মস্তিষ্কের ছবি তোলা যায়, তাহলে দেখা যাবে পুরো মস্তিষ্ক সুরের প্রভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
মস্তিষ্ক সঙ্গীতের স্মৃতি দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে।
এটা ডিমেনশিয়ার মত মানসিক অবস্থা ঠেকাতে বেশ কার্যকরী।
টিপস: গানের দল বা কয়্যারে যোগ দিন। আপনার প্রিয় ব্যান্ডের গানের অনুষ্ঠান দেখতে যেতে পারেন।
৭. বিছানায় শুয়ে পরীক্ষার পড়া
বিছানার ওপর শুয়ে-বসে পড়ার সুফল রয়েছে।, বলছেন বিজ্ঞানীরা।
দিনের বেলা যখন আপনি নতুন কিছু শিখছেন, তখন আপনার মস্তিষ্কে এক স্নায়ুকোষের সাথে নতুন একটি স্নায়ুকোষের সংযোগ তৈরি হয়।
আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন সেই সংযোগ আরও জোরদার হয়। এবং যা শিখেছেন তা স্মৃতি হিসেবে জমা হয়।
এক পরীক্ষায় জানা যাচ্ছে, আপনি যদি শোবার আগে কাউকে একটা লিস্ট দিয়ে বলেন সেটা মুখস্থ করতে, তাহলে পরদিন সকালে সে সেটা খুব সহজেই মনে করতে পারবে।
কিন্তু যদি সেই একই লিস্ট সকাল বেলা দিয়ে বলেন সন্ধ্যের সময় মুখস্থ বলতে তাহলে সেটা মনে করা বেশ কঠিন হবে।
তবে কোন দু:খের স্মৃতি নিয়ে শোবার সময় চিন্তাভাবনা না করাই ভাল। এতে মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
একই কারণে শোবার আগে হরর ছবি দেখাও বারণ।
এর বদলে সারা দিনের যেসব ভাল ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো মনে করার চেষ্টা করুন।
টিপস: পরীক্ষার পড়ার সময় প্রশ্নের জবাবগুলো শোবার সময় মনে করার চেষ্টা করুন। এবং চেষ্টা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ুন।
৮. ঘুম যখন ভাঙল
দিনের শুরুর সাথে তাল মিলিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠুন।
ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুম হলে মস্তিষ্ক সজাগ হওয়ার সময় পায় না।
কিন্তু দিনের পুরোটাকে ভালভাবে কাজে লাগানোর চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে কিভাবে আপনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তার মধ্যে।
সবচেয়ে ভাল হয় ঘুমাতে যাওয়ার সময় ঘর অন্ধকার থাকলে, এবং প্রভাতে দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে জেগে উঠতে হয়।
সূর্যের কিরণ যখন আপনার বন্ধ চোখের পাতা ভেদ করে ঢুকে পড়ে, তখন সেটা মস্তিষ্ককে কর্টিসল হরমোন ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে।
এর ফলে আপনি জেগে ওঠেন। তাই কী পরিমাণ কর্টিসল হরমোন আপনার দেহে ছড়িয়ে পড়ে, তার ওপর নির্ভর করবে দিনটা আপনার কেমন যাবে।
টিপস: এমন অ্যালার্ম ক্লক ব্যবহার করুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে যার সুর ক্রমশই বাড়তে থাকে।
তবে যাদের ঘুম কুম্ভকর্ণের মতো তাদের প্রয়োজন জেলখানার পাগলা ঘণ্টির মতো অ্যালার্ম ক্লক!
Sudipto Sarkar.
Want#1
0 মন্তব্যসমূহ