পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা সম্পর্কে জানার আগ্রহ মানুষের দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল । একটা ইটকে দুই টুকরা করলে দুইটা ইট পাওয়া যায় । সেটাকে আরও দুই টুকরা করলেও ইট-ই পাওয়া যায় । সেটাকে আরও টুকরা করলেও ইট ই পাওয়া যাবে । এভাবে আপনি যেকোন একটি বস্তুকে অসীম সংখ্যক টুকরা করে এমন এক অবস্থায় নিয়ে আসলেন, যখন আর কোনভাবেই এটাকে টুকরা করা যাবেনা । এই অবস্থায় পদার্থের এ ক্ষুদ্রতম কণাটি দেখতে কেমন হবে ? তার আচরণ কেমন হবে ? সেটাকে অন্য কোন উপায়ে আরও ভাঙ্গা সম্ভব কিনা ? ভাঙতে পারলে সেখান থেকে কি পাওয়া যাবে ? এসব প্রশ্ন মানুষকে ভাবায় । মানুষ জানতে চায় । মহাকাশ সম্পর্কে মানুষের যেমন বিভিন্ন রুপকথার গল্প বা শোলোক প্রচলিত ছিল, পদার্থের এই ক্ষুদ্রতম কণা নিয়ে তেমন কোন গল্প প্রচলিত ছিলনা । কারণ বিজ্ঞান মনস্ক ব্যাক্তিরা ছাড়া এটা নিয়ে সবাই খুব একটা বেশি ভাবেনি ।
পদার্থের এই ক্ষুদ্রতম কণিকা নিয়ে যারা ভেবেছেন তাদের মধ্যে একজন ব্যাক্তি, যিনি ছিলেন সাধারণ একজন স্কুল শিক্ষক । নাম জন ডাল্টন । তিনি এভাবে উল্লেখ করেন- যেকোন বস্তুকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করতে কাটতে কাটতে আমরা যদি একে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যাই, যাকে আর কাটা সম্ভব নয় সেটাই হচ্ছে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা । এটি সম্পূর্ণ অবিভাজ্য । পরবর্তীতে ডেমোক্রিটাস যার নাম দেন এটম বা পরমাণু । পদার্থের এই ক্ষুদ্রতম কণা যে অবিভাজ্য সেটা সে সময় অনেক প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছিলেন । আবার এক দল ছিলেন যারা বলেছেন পরমাণু অবিভাজ্য নয় । বরং এটা বিভাজ্য । আর এটা ভাঙলে এর গঠনকারী উপাদান পাওয়া যাবে ।
থমসনের পরমাণু মডেল
এরপর ১৮৯৭ সালে জোসেফ জন থমসন ক্যাথোড রশ্মি থেকে ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন যা কিনা ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট । তিনি এই ধারনাকে আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন যে, পরমাণু বিভাজ্য । ১৯০৪ সালে তিনি পরমাণু মডেল দেন যাকে আমরা তরমুজ বা কিচমিচ মডেল নামেই চিনি । তিনি পরমাণুকে একটি তরমুজের সাথে তুলনা করেন । তিনি উল্লেখ করেন, পরমাণু সামগ্রিকভাবে একটি তরমুজের মত, যেখানে পুরো তরমুজটি একটি পরমাণু যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ধনাত্মক আধান বন্ঠিত থাকে । এর মধ্যে তড়িৎ মিথস্ক্রিয়া অনুসারে ইলেকট্রনগুলো বন্ঠিত থাকে । অর্থাৎ তরমুজের বীজগুলো এক একটি ইলেকট্রন চিন্তা করা যেতে পারে । যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণু দেখতে একটি কিচমিচের মত । তখন পর্যন্ত নিউক্লিয়াস, প্রোটন কিংবা নিউট্রন আবিষ্কার হয়নি বলে তার মডেলে এগুলো সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায়না ।
থমসনের এই পরমাণু মডেলের সবচেয়ে বড় যে সীমাবদ্ধতা ছিল তা হল- ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক চার্জের বন্ঠন । সীমাবদ্ধতা থাকলেও পরমাণু যে বিভাজ্য, তার একটি শক্তিশালী যুক্তি তিনি দাঁড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল
পরমাণু যে বিভাজ্য এবং এর মধ্যে কি আছে যে ধারনাকে বাস্তবে রুপ দিতে কেনেথ রবার্ট রাদারফোর্ড তার দুইজন সহকারী গাইগার এবং মার্সডেনের সহযোগিতায় ১৯১১ সালে একটি পরীক্ষা চালান । তিনি অত্যন্ত পাতলা স্বর্ণের পাতের মধ্যে আলফা রশ্মি চালনা করেন এবং বিপরীত পাশে জিংক সালফাইটের একটি পর্দা ব্যবহার করেন । যাতে বিক্ষিপ্ত আলফা কণা পরমাণুর মধ্যদিয়ে পর্দায় গিয়ে পড়ে । আর বেড়িয়ে আসা সেই আলফা কণার সংখ্যা এবং আচরণ থেকেই পরমাণুর অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে তিনি ধারণা দিতে পারেন ।
তিনি দেখলেন, অধিকাংশ আলফা কণা উৎস থেকে বেড়িয়ে পরমাণুর মধ্যদিয়ে সোজা পর্দার গিয়ে পড়ছে । কিন্তু যেসব কণা পরমাণুর কেন্দ্রের পাশদিয়ে যাচ্ছে, তারা বেঁকে যাচ্ছে । আর যারা কেন্দ্র দিয়ে যায়, সেগুলো পুনরায় ফিরে আসছিল । তবে এই ফিরে আসা বা বেঁকে যাওয়া কণার সংখ্যা ছিল নগণ্য । তিনি উল্লেখ করেন- অবশ্যই পরমাণুর কেন্দ্রে অনেক শক্তিশালী এবং ভারি বস্তু বিদ্যমান যার কারণে শক্তিশালী আলফা কণা বেঁকে যায় কিংবা ফিরে আসে । আবার যেহেতু পরমাণুর বেশিরভাগ স্থানই ফাঁকা, তাই পরমাণুর ভর বলতে আমরা এই ভারি কেন্দ্রটির ভরই বুঝে থাকি । তিনি এর কেন্দ্রের নাম দেন নিউক্লিয়াস ।
যেহেতু পুরো পরমাণুটি সামগ্রিকভাবে চার্জ নিরপেক্ষ, তাই পরমাণুর চারপাশে যতগুলো ঋণাত্মক চার্জ যুক্ত ইলেকট্রন আছে, পরমাণুর কেন্দ্রে ততগুলো ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটন আছে । এর আগে ১৯০৯ সালে রাদারফোর্ড ফয়েল পরীক্ষায় ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটনও আবিষ্কার করেছিলেন ।
তিনি উল্লেখ করেন সৌর জগতের গ্রহগুলো যেমন সূর্য্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, তেমনি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে । এই ঘুর্ণনরত ইলেকট্রনের ঘুর্ণনের কারণে ক্রিয়াশীল কেন্দ্রবিমুখী বল এবং ইলেকট্রন ও নিউক্লিয়াসের মধ্যবর্তী স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল বা কুলম্বীয় বল পরস্পর সমান ।
তার এই মডেলের অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা থাকলেও পরমাণু বিভাজ্যতা নিয়ে প্রায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে সক্ষম হন । পাশাপাশি তার নিউক্লিয়াস এবং ১৯০৯ সালে তার প্রোটন আবিষ্কার ছিল পরমাণুর ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক ।
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের অনেক সাফল্য থাকলেও তার এই মডেলের অনেকগুলো সীমাবদ্ধতাও ছিল । তার যে প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল, তিনি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ইলেকট্রনের ঘুর্ণনকে সৌরজগতে সূর্য্যের চারিদিকে গ্রহের ঘুর্ণনের সাথে তুলনা করা । সৌরজগতে গ্রহ এবং সূর্য্য উভয়ই চার্জ নিরপেক্ষ । অপরদিকে ইলেকট্রন এবং নিউক্লিয়াস চার্জ বিশিষ্ট কণিকা ।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে- চার্জ যুক্ত হতেই পারে, কিন্তু ঘুর্ণনের পদ্ধতি তো একই । কিন্তু চার্জবিশিষ্ট বস্তু অন্য একটি বিপরীত চার্জবিশিষ্ট বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘোরা এবং চার্জ বিহীন বস্তুর অন্য একটি চার্জ বিহীন বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘোরা এক রকম নয় । ম্যাক্সওয়েল দেখান- কোন একটি চার্জ বিশিষ্ট বস্তু অন্য একটি চার্জ বিশিষ্ট বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকলে তা ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ করতে করতে এক সময় কেন্দ্রে এসে পতিত হবে । যেমনটা পরমাণুতে ঘটলে পরমাণুর ধ্বংস নিশ্চিত । কিন্তু পরমাণুতে এমন কোন ভাঙ্গন ঘটে না । তাই এই দিক থেকে রাদারফোর্ড পরমাণুর স্থায়িত্ব দিতে সক্ষম হননি । আবার জোহাননেস কেপলার দেখান- সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্য্যের চারিদিকে বৃত্তাকার নয় বরং উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে । সেক্ষেত্রে ইলেকট্রন পরিভ্রমণের কক্ষপথ সম্পর্কে কোন ধারণা রাদারফোর্ড দেননি ।
আবার পরমাণুর বর্ণালী সম্পর্কে কোন ধারণা রাদারফোর্ড দেননি । যা কিনা একটি পরমাণুর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে । এমনকি পরমাণুর বর্ণালী দেখে আমরা এক একটি পরমাণুর পরিচয় নির্ধারণ করতে পারি ।
বোর পরমাণু মডেল
রাদারফোর্ডের সীমাবদ্ধতা থেকে উঠে এসে বিজ্ঞানী নীলস হেনরিক ডেভিড বোর ১৯১৩ সালে পরমাণু সম্পর্কিত তার মডেল প্রকাশ করেন । তার মডেলে তিনি উল্লেখ করেন-
নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেকট্রনগুলো কতগুলো সুনির্দিষ্ট বৃত্তাকার কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে । যেখানে ঘুর্ণনের কারণে ইলেকট্রনের কেন্দ্রবিমুখী বল এবং নিউক্লিয়াসের সাথে ইলেকট্রনের স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল বা কুলম্বিয় বল পরস্পর সমান ।
বৃত্তাকার, সরলরেখা কিংবা একেবেকে যেভাবেই চলুক না কেন যেকোন গতিশীল বস্তুর জন্য ভরবেগ অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাশি । তিনি তার এই মডেলে ঘুর্ণায়মান ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগের মান নির্ণয় করেন । ইলেকট্রনের এই কৌনিক ভরবেগ এবং কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবিমুখী বলের গাণিতিক রুপ থেকে আমরা খুব সহজেই পরমাণুর যেকোন কক্ষপথে ইলেকট্রনের বিরাজমান শক্তি, ইলেকট্রনের বেগ এবং কক্ষপথের ব্যাসার্ধ বা নিউক্লিয়াস থেকে ইলেকট্রনের দূরত্ব নির্ণয় করতে সক্ষম হই । যা ছিল পরমাণুর জন্য আমাদের অনেক বড় অর্জন ।
বোর দেখান যেকোন কক্ষপথে অবস্থানকালে ইলেকট্রনের নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি থাকে । সেই শক্তির মান নিম্ন শক্তিস্তর গুলোর জন্য কম এবং ক্রমাগত উদ্ধতম শক্তিস্তরগুলোর জন্য বেশি । ইলেকট্রন যখন নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উদ্ধতম শক্তিস্তরে যায় তখন অতিরিক্ত শক্তি অর্জনের জন্য ইলেকট্রন শক্তি শোষণ করে । আবার উদ্ধতম শক্তিস্তর থেকে যখন ইলেকট্রন নিম্ন শক্তিস্তরে আসে তখন অতিরিক্ত শক্তি ছেড়ে দেয় বা বিকিরণ করে । এই শোষণ বা বিকিরণ যাই ঘটুক না কেন উভয়ের ক্ষেত্রে শক্তির শোষণ এবং বিকিরণের সময় ইলেকট্রনের স্থানান্তরে যথাক্রমে শোষণ এবং বিকিরণ বর্নালী তৈরি করে । যেখান থেকে বোর পরমাণুর বর্ণালী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেন ।
এখানে উদ্ধতম যেকোন শক্তিস্তর থেকে প্রথম শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধাপান্তরিত হলে যে বর্ণালী তৈরি হয়, তাকে বলা হয় লাইম্যান সিরিজ । একইভাবে উদ্ধতম যেকোন শক্তিস্তর থেকে দ্বিতীয় শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধাপান্তরিত হলে তাকে বলা হয় বামার সিরিজ । উদ্ধতম যেকোন শক্তিস্তর থেকে তৃতীয় শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধাপান্তরিত হলে তাকে বলা হয় প্যাশ্চেন সিরিজ । উদ্ধতম যেকোন শক্তিস্তর থেকে চতুর্থ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধাপান্তরিত হলে তাকে বলা হয় ব্র্যাকেট সিরিজ । উদ্ধতম যেকোন শক্তিস্তর থেকে পঞ্চম শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধাপান্তরিত হলে তাকে বলা হয় ফান্ড সিরিজ । আর উদ্ধতম যেকোন শক্তিস্তর থেকে ষষ্ঠ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধাপান্তরিত হলে তাকে বলা হয় হামফ্রিস সিরিজ ।
বোর পরমাণু মডেলের অনেকগুলো সাফল্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ইলেকট্রনের ভরবেগ, শক্তি, বেগ, কক্ষপথের ব্যাসার্ধ নির্ণয় । ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকৃতি নির্ণয় । পরমাণুর স্থায়িত্ব এবং বর্ণালীর ধারণা । তবে তার এই মডেলেরও উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা ছিল ।
বোর পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা
বোর পরমাণু মডেল এবং এর হিসাব নিকাশ সব একটি প্রোটন এবং একটি ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণু তথা হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । অন্য সকল পরমাণুর জন্য এটি গ্রহণযোগ্য নয় ।
বোরের বর্ণালীর ধারণা অনুসারে ইলেকট্রন উদ্ধতম শক্তিস্তরে গমন কিংবা নিম্ন শক্তিস্তরে আগমনের ফলে কক্ষপথদ্বয়ের মাঝে একটি করে বর্ণালী বা দাগ সৃষ্টি হওয়ার কথা । কিন্তু পরমাণুতে এই বর্ণালী ছাড়াও এর পাশে আমরা অনেকগুলো ছোট ছোট বর্ণালী রেখা দেখতে পাই । এগুলো উৎপত্তির কারণ এবং তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা বোর আমাদের দিতে পারেন নি ।
পরমাণু সম্পর্কে এতসব মডেলও ততদিনেও মানুষের মনে পরমাণু সম্পর্কে জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটাতে পারেননি । পরমাণু নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তাদের মনে উদয় হতেই থাকে । এমন চিন্তাবিদ মানুষদের মধ্যে একজন ছিলেন জেমস চ্যাডউইক । তিনি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সাথে চার্জ বিহীন কিন্তু ইনট্রিনজিক চুম্বকত্ব বিশিষ্ট এক ধরণের কণিকার অস্তিত্ব খুজে পান । যার নাম দেন নিউট্রন ।
পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উত্তর মানুষ ততদিনে পেয়ে গিয়েছে । কিন্তু সবকিছুতেই কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা লুকিয়ে ছিল । ঠিক যেমন সর্বশেষ বোরের পরমাণু মডেল নিয়ে শুধুমাত্র হাইড্রোজেন পরমাণু ব্যাতিত অন্যসব পরমাণুর জন্য সীমাবদ্ধতা চলে আসে । তাই আমাদের প্রয়োজন দেখা দেয় এমন এক মডেলের যা কিনা পরমাণু সম্পর্কে আমাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেয় । কিন্তু সেটা কিভাবে ?
আমরা পরমাণু এবং ক্ষুদ্র ভর ও আকারের কণা সম্পর্কে আবিষ্কার এবং জ্ঞান কুড়াতে থাকি । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি, ডি-ব্রগলীর কণা-তরঙ্গ দ্বিত্বতা, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের ফোটনের ধারণা, স্রোডিঞ্জারের ইলেকট্রনীয় সমীকরণ ইত্যাদি । আর এসব তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ম্যাক্স প্লাংক এবং আলবার্ট আইনস্টাইনের যৌথ সংস্করণে আমরা পাই কোয়ান্টাম মডেল ।
কোয়ান্টাম মডেল বা কোয়ান্টাম মেকানিকস আবিস্কারের পর থেকে পরমাণু সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আমাদের হাতে আসতে শুরু করে । পরমাণু সম্পর্কে রাদারফোর্ড এবং বোরের ধারণাগুলোর অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা এবং নতুন তথ্য আমরা জানতে পারি । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পল ডিরাকের ইলেকট্রনের সুপার পজিশনের ধারণা । যেখানে ইলেকট্রন একইসাথে সকল স্থানে বিরাজ করে আবার করেনা । ইলেকট্রন এখানে সম্ভব-অসম্ভবতার বাধকে ভেঙ্গে দিয়েছে ।
পরমাণুর বিভাজ্যতা পুরোপুরি আজ প্রমাণিত । যেখানে পরমাণুকে ভাঙলে আমরা পাই ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন । এখন আধুনিক তথা কোয়ান্টাম মডেল আমাদের আরও বলে- এই ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রনও বিভাজ্য । এরা আরও অনেক ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা গঠিত । একটা সময় হয়তো আবিষ্কার হবে সেই সকল কণাও কোন এক শক্তি থেকে এসেছে । এখানেই হয়তো লুকিয়ে আছে কোয়ান্টাম এনার্জি বা ভ্যাকুয়াম এনার্জি এবং কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের রহস্য ।
এখনও অনেকেই বিশ্বাস করেন কোয়ান্টাম মডেল থেকেই পরমাণু সম্পর্কে আরও অনেকগুলো অজানা সত্য আমরা শীঘ্রই পাব । তাই কোয়ান্টাম মেকানিকস নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান প্রেমিকদের মনে আলাদা স্থান রয়েছে ।
0 মন্তব্যসমূহ