চিত্রে যাকে দেখছেন তিনি ঢাকার একজন পান বিক্রেতা। একসময় দুইটা ট্রাকের মালিক ছিলেন। চলুন তার জীবনের কাহিনী জানি এবং তার জীবনের ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন হই।
ঢাকায় কাঁচা বাজারে বসে ছিলাম । হঠাৎ করে দেখতে পেলাম একজন হাসিখুশি মানুষ পান বিক্রি করছে
। বেশ কৌতূহল নিয়ে তার সাথে কথা বললাম । তার জীবন নিয়ে কথোপকথনটি নিচে তুলে ধরলাম সংক্ষিপ্তভাবে-
আমি : আঙ্কেল আপনার হাসিখুশি জীবনের রহস্য জানতে চাই।
পান বিক্রেতা : আমার জীবন এত সহজ না বাবা, অনেক দুঃখ আমার জীবনে, হাসি মুখে থাকি মানুষকে বুঝতে দেই না।
আমি : আঙ্কেল আপনার জীবন সম্পর্কে জানতে চাই , বলেন প্লিজ 😊
পান বিক্রেতা: বাবা আমার বাড়ি বগুড়াতে । 2009 সালে ওইদিকে আমি ছোটখাটো ব্যবসা করতাম | 2010 সালের ওইদিকে কিস্তিতে দুইটা ট্রাক কিনলাম, প্রথম দিকে ব্যবসা অনেক ভালো চলতেছিল, আস্তে আস্তে টাকা পয়সার মালিক হতে লাগলাম, আগে সিগারেট খেতাম না, কিন্তু বন্ধুদের সংস্পর্শে এসে সিগারেট বিড়ি জুয়া এইসব করে টাকা ঊড়াতাম।
এত সুখ কপালে সইলো না(হয়তো খারাপ পথে গেছিলাম এজন্য) আমার একটা ট্রাক এক্সিডেন্ট করলো সাথে একজন লোক মারা গেল, জরিমানা দিলাম 2 লক্ষ টাকা।
ভাগ্যটা এতই খারাপ যে প্রথম ট্রাক এক্সিডেন্ট এর পর দ্বিতীয় ট্রাকটা ঠিক এক মাস পর অ্যাক্সিডেন্ট করল।
এইবার প্রায় 25 লাখ টাকার ঋণ এ পড়ে গেলাম দুটি ট্রাক এর এক্সিডেন্ট এর জন্য।
কোন উপায় না দেখে দুইটা ট্রাক 10 লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিলাম, আমার ভাগের যতটুকু সম্পদ ছিল তার সবটুকু বিক্রি করে দিলাম সাত লক্ষ টাকা দিয়ে।
2 মাস আগে আমার একটা গুরুতর অ্যাক্সিডেন্ট হইল মোটরসাইকেল এ, এরপর থেকে ভারী কোনো কাজ করতে পারিনা,
এত টাকার ঋণ এর টেনশন।
তবুও এখন পান এবং সিগারেট বিক্রি করে ভালোই চলে যাচ্ছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। মাসে প্রায় 20000 টাকার মতো ঋণ পরিশোধ করি। জীবনের কাছে আর আমার কিছুই চাওয়ার নেই। এতকিছুর পরে যে আমি বেঁচে আছি হাসিমুখ নিয়ে বেঁচে আছি এটার জন্য আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আমি: মানুষের হাসি মুখের কোণে যে এত দুঃখ লুকিয়ে থাকে তা আপনাকে না দেখলে কখনো বুঝতাম না আঙ্কেল। আপনি বিচলিত হন না আল্লাহর উপর আস্থা রাখেন। ❤️
এইতো আঙ্কেল এর জীবনের কাহিনী।
0 মন্তব্যসমূহ