ছাত্র জীবনে প্রেম থেকে দূরে থাকার উপায়

 


ছাত্র জীবনে প্রেম থেকে দূরে থাকার ৬টি উপায়

ছাত্র জীবনে প্রেম সাফল্যের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। অনেক প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীর সম্ভাবনা নস্ট হয়ে গেছে শুধু এই প্রেম বা প্রথম প্রেম নামক মোহের কারনে। ভালবাসা কি এবং ভালবাসার কথা থেকে একধরনের নিঃসঙ্গতা তৈরির ফলে অনেকে এই ধংসাত্মক আবেগে পড়ে যায়। ভালবাসার গল্প শুনে, আসেপাশের সবাইকে দেখে মনে করে, শুধু আমার জীবনেই ভালবাসার কথা বলার, শোনার কেউ নাই। এই যে নিঃসঙ্গতা, এটা থেকে কেউ এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা পায় আবার কেউ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে বুঝার চেস্টা করে ভালোবাসা কি। আবার অনেকে মনে করে প্রেম করলে বোধহয় নিঃসঙ্গতা থাকবেনা, প্রেমিকা প্রেমের কবিতা শোনাবে, প্রেমের ছন্দ শোনাবে কিন্তু এই প্রেম আসলে ছাত্রজীবনে যেমন নিজেকে পরিবার থেকে দূরে নিয়ে যায়, তেমনি জীবনকে এলোমেলো করে দেয় এবং এক সময় ভালবাসার এই গল্প গুলো তিক্ত লাগে। তাই প্রেম থেকে দূরে থাকার উপায় এবং প্রেম না করে প্রথম প্রেমের অভিজ্ঞতা অর্জন করার উপায়গুলো আসুন জেনে নেই:-


ভালো কিছুর সাথে সম্পৃক্ত হোনঃ

একটু অবসর পেলে ছাত্র-ছাত্রীরা কাউকে ফোন করে, মেসেজ পাঠায়, রাতভর ফ্রী ভালবাসার কথা বলার সুযোগ নিয়ে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু যে ছাত্র-ছাত্রীরা বুদ্ধিমান, তারা নিজেদের নিঃসঙ্গতাকে দূর করার জন্য মোবাইলে কথা বলা, প্রেমের কবিতা পড়া, ভালবাসার গল্প করা বাদ দিয়ে ভালো কিছুর সাথে যুক্ত হয়। এই ভালো কোন কাজ হতে পারে, বই হতে পারে, ইবাদত হতে পারে। তাই নিজেকে ভাল কিছুর সাথে সম্পৃক্ত করুন।

ক্ষতিকর বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকুনঃ

কারও সাথে কথা হলে, দেখা হলেই প্রেমের ছন্দ তৈরি হয়ে যাবে, ভালবাসার গল্প করতে হবে এমন কোন কথা নেই। এমনকি সে বন্ধুও নয়। অনেক বন্ধু-বান্ধব আছেন যারা লেজ কাটা শেয়ালের মত। নিজেরা প্রেম নামক মোহে যুক্ত হয়ে, নিজেদের ভালবাসার গল্প অন্যদের শুনিয়ে, প্রভাবিতও করতে পারে, মন্ত্রনা দিতে পারে, লেজ হারানোর ফাঁদের পা দিতে। তাই এসব আত্মঘাতি বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকুন।

সম্পর্কের ধরনে সচেতন হোনঃ

ছাত্রজীবনে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্বাভাবিক সুসম্পর্ক থাকবে। তাই বলে তাদের মধ্যে ভালবাসার কথা, ভালবাসার গল্প এবং প্রেমের কবিতা নিয়ে আলোচনা হবে তা কিন্তু নয়। যদি সহপাঠী হয় তাহলে সহপাঠী সুলভ, প্রতিবেশি হলে প্রতিবেশি সুলভ, আত্মীয় হলে আত্মীয় সুলভ আচরন হবে। অর্থাৎ সে প্রেক্ষাপটে হওয়া উচিত।

প্রেমজনিত সমস্যা এড়িয়ে চলুনঃ

একজন শিক্ষার্থীর মূল কাজ হচ্ছে পড়াশুনা করা। পড়াশুনা বাদ দিয়ে ভালবাসা কি, প্রথম প্রেম নিয়ে জল্পনা কল্পনা, ভালবাসার কথা এবং অন্য যে কোন কাজই ভাল পড়াশুনার পথকে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রেমজনিত সমস্যা এবং ভালবাসার গল্প বা ভালবাসার কথা যখনই শুনবেন, এটা থেকে দূরে থাকবেন। বুঝবেন যে এটা রোগ, একধরনের অসুস্থতা।

প্রো-একটিভ থাকুনঃ

এই যুগে ২/৪ টা প্রেম না থাকলে সবাই আনস্মার্ট ভাববে, খ্যাত ভাববে তাছাড়া এক দুবার প্রেম না করলে ভালবাসা কি বুঝবো কি ভাবে, অন্য বন্ধুরা কি ভাববে- ভাবুক। যারা ভাববে তারা নিজেদের লেজ হারিয়ে অন্যদের সে পথে নিতে চাচ্ছে। অতএব অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে প্রো-একটিভ থাকুন।

লক্ষ্যকে বড় রাখুনঃ

জীবনের লক্ষ্যকে উঁচু রাখলে, এই সব হাবিজাবি প্রেমের ছন্দ, প্রেমের কবিতা, ভালবাসার গল্প, ভালোবাসার কথা  এসব বিষয়, মস্তিষ্ক থেকে দূরে থাকবে


. যা ঘটেছে স্বীকার করুন কিন্তু সেখানে পড়ে থাকবেন না

বিচ্ছেদের পর অনেকে পুরনো সম্পর্ককে অস্বীকার করতে চায় কিন্তু দেখা গেছে এই অস্বীকৃতি সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সমস্যা সমাধানের আগে সমস্যাটাকে স্বীকার করতে হবে। কিন্তু সেই সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকা যাবেনা। সেখান থেকে উতরানোর জন্য সচেতন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এটা সুন্দরভাবে করার একটা প্রক্রিয়া হচ্ছে নিজের অনুভূতিগুলো লিখে রাখা। মনের মধ্যে ভালো মন্দ যা-ই খেলা করুক না কেন সেটা লিখেন, নিজের সাথে আলাপচারিতা, নিজের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা লিখেন। এটা অনেক উপকারে আসে।

 নতুন স্মৃতি তৈরি করুন পুরনো স্মৃতিকে সরিয়ে ফেলার জন্য আপনার নতুন স্মৃতি তৈরি করতে হবে। আপনার হয়তো মনে আসছে কোথায় কোথায় আপনার সাবেক প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে ঘুরেছেন। এবার নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে আসুন, বিভিন্ন খেলায় অংশ নিন। জাম্পিং, স্কাইডাইভিং, রক ক্লাইম্বিং, সাইক্লিং, সুইমিং করতে পারেন। নতুন নতুন, মজার মজার স্মৃতি তৈরি হলে পুরনো ফিকে হতে শুরু করবে যেটা আপনার জন্য জরুরি।

সাবেকের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করুন আপনি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন, পুরনো সম্পর্ককে মাথা থেকে মুছে ফেলতে চাচ্ছেন অথচ তার নাম্বার মাথায় ঘুরছে, ফেসবুকে তার ওয়াল ঘুরছেন, সে কি করছে দেখছেন তাহলে আপনি সমস্যা থেকে বের হতে পারবেন না। বিচ্ছেদের পর যে মানসিক সংকট হানা দেয় তার থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়ার জন্য সাবেকের নাম্বারটি ডিলিট করে দিতে পারেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিতে পারেন, তার নাম্বারটি ভুলতে না পারলে নতুন কিছু নাম্বার মুখস্থ করার চেষ্টা করতে পারেন। সাবেকের সকল মেসেজ, ছবি বা যত স্মৃতি আছে ডিলিট করতে পারেন। যদি আপনি পুরনো সম্পর্ক থেকে উঠে দাঁড়াতে চান তাহলে এই নির্মম কাজগুলোই করতে হবে।

অনুপ্রেরণার মানুষ খুঁজে বের করুন প্রতারণা কিংবা ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে দূরে চলে আসবার কষ্টটা আপনার একার বলে মনে হলেও বাস্তবে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই কষ্টের পথটা ধরে হেঁটেছেন, হাঁটছেন এবং হাঁটবেনও। সাইকোলজি টুডে অনুসারে. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মতে নিজের পছন্দের মানুষের কাছ থেকে আমরা ইচ্ছাশক্তি নিজের ভেতরে নিয়ে নিতে পারি। আর তাই এমন কোনো আদর্শ ব্যক্তিকে খুঁজুন যে প্রতারণা কিংবা এমন হাজারো কষ্টের ভেতর দিয়ে গিয়েও উঠে দাঁড়িয়েছে। থেমে তো যায়ইনি, বরং এতটা শক্তি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে যে তাকে ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলোকেই পস্তাতে হয়েছে পরবর্তীতে। চারপাশে না পেলে দেখুন বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন আর নিজেকে তাদের জায়গায় দাঁড় করিয়ে এগিয়ে যান সামনে।

নতুন অভ্যাস, নতুন নেশা তৈরি করুন আমরা আসলে আমাদের অভ্যাসের ফল। সম্পর্কও একটা অভ্যস্ততার বিষয়। আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে দীর্ঘদিন থাকাতে একটা অভ্যাসের বাধনে আবদ্ধ হয়ে গেছেন। এখন বিচ্ছেদের পর সেই অভ্যাস থেকে তো বের হয়ে আসতে হবে। এর সেরা উপায় হলো নতুন অভ্যাস তৈরি করা। নেশা শব্দটা নেতিবাচক শুনতে হলেও আপনার ভালোবাসার মানুষটির প্রতি আপনার দূর্বলতার কারণ কিন্তু এটাই। আর তার প্রতি এই নেশাকে কাটিয়ে উঠতে নতুন কোনো নেশাকে আপন করে নিন। তবে সেটা মাদক কিংবা হঠাৎ করে বেছে নেওয়া কোনো মানুষ নয়। বরং নতুন কোনো শখ, লেখালেখি, সমাজকল্যাণমূলক কাজ, রান্না, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, ছবি আঁকা- এসব কিছুকে আপন করে নিন। নতুন কোনো লক্ষ্যকে খুঁজে নিন। কোনো কিছু নেই এমন ভাবটা ফেরত এলে সেই নতুন লক্ষ্যকে নিয়ে মেতে উঠুন।

নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের যত্ন নিন

অন্যের কথা ভাবতে ভাবতে এই সময়টাতে মানুষ যা করে তা হলো নিজের অযত্ন করে। এতে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়।

মানসিক চাপ মানুষের ভেতরে হতাশা, অস্থিরতা তৈরি করে। ফলে মানুষ একটা খুঁটির আশ্রয় চায়। অনেকটা ভেসে যাওয়া মানুষের একটা খড়কুটো আঁকড়ে ধরবার মতন। এসময় সম্পর্কের বাজে দিকগুলো মাথায় না এসে প্রাধান্য পায় ভালো সময়গুলো। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে আগের সময়টাতে। পেতে ইচ্ছে করে আগের যত্ন কিংবা ভালোবাসাটা। আর এই সমস্যা থেকে দূরে যেতে চেষ্টা করুন মানুষের সাথে মিশতে। বন্ধুদের আড্ডায় যেতে। বান্ধবীর সাথে ঘুরে বেড়াতে। নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে আপনার যত্ন নেওয়ার আরো অনেকে আছে।

‘শ্বেত ভল্লুক’ এফেক্ট মনোবিজ্ঞানীদের মতে একজন মানুষ সিগারেট ছাড়তে চাইলে সেটা তাকে আরো বেশি ধরে বসে, চকলেটে আসক্ত কেউ কম খেতে চাইলে আরো বেশি চকলেটের প্রতি মোহ বাড়ে। আর এসবের কারণটাকে মনোবিদরা নাম দিয়েছেন হোয়াইট বিয়ার বা শ্বেত ভল্লুক এফেক্ট। সাদা ভাল্লুককে যতটাই নেই নেই মনে করা হোক সেটা আরও বেশি মনের ভেতরে চলে আসে। ঠিক তেমনি ভুলতে চাইছেন এমন কাউকেও অতিরিক্ত সময় ভোলার চেষ্টা করলে তাকে আরো বেশি মনে পড়ে। তাই হঠাৎ করে কাউকে জোর করে ভুলতে চেষ্টা করবেন না। যদি ভুলতে চাওয়া মানুষটির কথা মনে পড়েই যায় তাহলে একদমই চিন্তায় পড়বেন না। কারণ এটা খুবই স্বাভাবিক। চিন্তা না করে নিজের আর সব কাজ ঠিকঠাকভাবে করতে থাকুন আর কি কারণে সেই মানুষটিকে ভুলতে চাইছেন আপনি সেই বাজে অভিজ্ঞতাটির কথা মনে করুন



Reference Book☆☆☆

আপলোড করা হচ্ছে: 113109-এর মধ্যে 113109টি বাইট আপলোড করা হয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ